Thursday, February 3, 2011

হাঁটায় বাড়ে স্মরণশক্তি!

বুদ্ধিবৃত্তিক ও স্মৃতিশক্তি নির্ভর কাজগুলো চলে নগর জীবনেই। গ্রামীণ জীবনেও যে নেই তা নয়। তবে তাতে কায়িক শক্তিটাকেই বেশি প্রাধান্য দিতে হয়। কিন্তু নগর জীবন গ্রামীণ জীবনের মতো কায়িক শক্তিনির্ভর নয়। বরং মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর চর্চার মাধ্যমে নগর জীবনের রমরমা অবস্থা। নাগরিক মানুষ দিনে দিনে আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে। এর মূলে রয়েছে পরিকল্পনা—মাথা খাটিয়ে বের করা নিত্যনতুন পরিকল্পনা ও চিন্তা, যা মানুষকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সুখ্যাত লেখক  যাযাবর তার ‘দৃষ্টিপাত’ বইটা শুরু করেছিলেন ‘বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ’ এই কথা দিয়ে। তবে যাযাবর একথাটা বলেননি যে, বিজ্ঞান মানুষের কায়িক শ্রমের ব্যাপারটাও কেড়ে নিয়েছে। অন্তত নগর সভ্যতা তো হাঁটাহাঁটিসহ সব ধরনের কঠোর পরিশ্রম থেকে মানুষকে চিরতরে মুক্তি দিয়েছে। নাগরিক মানুষের জীবন ঘোরে এখন মেকানিক-ইলেকট্রিক-ইলেক্ট্রনিক আরাম-আয়েশের চক্রে।

কিন্তু অতি সুখও যে সুখ নয়! নাগরিক সভ্যতার অনিবার্য প্রতিক্রিয়া হলো মানুষকে কায়িক শ্রমবিমুখ করে ফেলা। বিশেষ করে হাঁটাহাঁটির কথাটাই আসে প্রথমে। রিকশা-বাস-কার ছাড়া একপাও চলতে চায় না নগরবাসী। অথচ হাঁটাহাঁটি যে একটা কার্যকর ব্যায়াম, সেটা আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানে স্বীকৃত একটা ব্যাপার। সম্প্রতি গবেষকরা হাঁটাহাঁটি নিয়ে আরেকটা সুখবর দিয়েছেন। সেটা হলো, মানুষ যদি সপ্তাহে কয়েকবার ৪০ মিনিটের মতো সময় হাঁটাহাঁটি করে, তাহলে বার্ধক্য থমকে দাঁড়ায়, মস্তিষ্কের শক্তি বেড়ে যায়। স্মৃতিশক্তিও প্রখর হয়ে ওঠে। সূত্র বিবিসি।

১২০ জনের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে তারা সিদ্ধান্ত পৌঁছেছেন, হাঁটাহাঁটি মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের আকার বাড়িয়ে দেয়। মানুষের স্মৃতি সংরক্ষণের কাজটা চলে ওই হিপোক্যাম্পাসেই। প্রায় এক বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষর পর এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স সাময়িকীতে। এই সময়ের মধ্যে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের স্মৃতিশক্তির উন্নতি দেখেই উত্সাহিত হয়েছেন গবেষকরা। তারা দেখেছেন, হাঁটাহাঁটির মতো শারীরিক ব্যায়ামের ফলে বয়সজনিত বিভ্রান্তি ও স্মৃতিভ্রংসতার হাত থেকে তুলনামূলকভাবে অনেকটাই মুক্ত রয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। ৬০ বা তার বেশি বয়সী এসব লোকের ক্ষেত্রে আলঝেইমাসহ অন্যান্য স্মৃতিক্ষয়ী উপসর্গের প্রাদুর্ভাব অনেকটাই কম।

ব্রিটেনে বর্তমানে ৮ লাখ ২০ হাজার লোক ডাইমেনশিয়া তথা স্মৃতিবিভ্রান্তি রোগে ভুগছেন। ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা এর দ্বিগুণে উন্নীত হতে পারে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্যবিদদের। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর কার্যকর কোনো প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার কিংবা উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি। তবে যতদিন না তা হচ্ছে ততদিন নতুন এই তথ্যের আলোকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করে রোগের প্রকোপ কমিয়ে রাখা সম্ভব হতে পারে।

এতে উত্সাহিত হয়ে উঠেছেন পিটাসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর কির্ক এরিকসন ও তার সঙ্গীরা। তাদের বিশ্বাস, স্বল্প বা পরিমিত মাত্রার শারীরিক পরিশ্রম মানুষকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে পারে। তারা এ ব্যাপারে আরও ব্যাপক গবেষণার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

No comments: